Header Ads

জেএসসি-২০২২ সালের পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সারাংশ লিখন

সারাংশ লিখন


০১.
কোথা থেকে এসেছে আমাদের বাংলা ভাষা? ভাষা কি জন্ম নেয় মানুষের মতো? বা যেমন বীজ থেকে গাছ জন্মে তেমনভাবে জন্ম নেয় ভাষা? না, ভাষা মানুষ বা তরুর মতো জন্ম নেয় না। বাংলা ভাষাও মানুষ বা তরুর মতো জন্ম নেয়নি, কোনো কল্পিত স্বর্গ থেকেও আসেনি। এখন আমরা যে বাংলা ভাষা বলি, এক হাজার বছর আগে তা ঠিক এমন ছিল না। সে-ভাষায় এ-দেশের মানুষ কথা বলত, গান গাইত, কবিতা বানাত। মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি। রূপ বদলে যায় শব্দের, বদল ঘটে অর্থের। অনেক দিন কেটে গেলে মনে হয় ভাষাটি একটি নতুন ভাষা হয়ে উঠেছে। আর সে ভাষার বদল ঘটেই জন্ম হয়েছে বাংলা ভাষার। (রা.বো. ১৯ :  সি.বো., ১৯)


সারাংশ: ভাষার প্রধান গুণ বদলে যাওয়া। সময়ের সঙ্গে মানুষের মুখে মুখে বদল ঘটে ভাষার ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির। শব্দের সঙ্গে সঙ্গে অর্থেরও পার্থক্য তৈরি হয়। আর এভাবেই হাজার বছরের পথ-পরিক্রমায় বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে।

======================================

০২.
আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ। আনন্দকে আমরা বুঝি রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ ইত্যাদির সাহায্যে, ইন্দ্রিয় সকলের সাহায্যে। মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে তার মনকে প্রকাশ করতে চায়— নানারূপে। তাই সৃষ্টি হলো চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক। পুরাকালের গুহামানব থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে, সুন্দরকে অন্য মানুষের মধ্যে বিস্তার করতে চেয়েছে। তাই সৃষ্টি হয়েছে নানান আঙ্গিকের শিল্পকলা। (ম.বো.১৯; দি বো.১৮,১৭. সি. বো. ১৮, জু. স্কু.সা.প. ১৩)


সারাংশ: নানারকম শিল্পকলার মধ্য দিয়ে মনের আনন্দ প্রকাশ পায়। মানুষ এসব শিল্পকলাকে আবার নানা মাত্রায় ও আঙ্গিকে সুবিন্যস্ত করেছে, যা সুপ্রাচীন কাল থেকে আজকের আধুনিক সমাজজীবন পর্যন্ত বিস্তৃত। এভাবেই মানুষ তার অনুভূতিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে।

======================================

০৩.
বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে 'বাঙালির বাংলা', সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে। বাঙালির মতো জ্ঞান-শক্তি ও প্রেমশক্তি (ব্রেন সেন্টার ও হার্ট সেন্টার) এশিয়ায় কেন, বুঝি পৃথিবীতে কোনো জাতির নেই। কিন্তু কর্মশক্তি একেবারে নেই বলেই তাদের এই দিব্যশক্তি তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাদের কর্মবিমুখতা, জড়তা, মৃত্যুভয়, আলস্য, তন্দ্রা, নিদ্রা, ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিচ্ছার কারণ। তারা তামসিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে চেতনা-শক্তিকে হারিয়ে ফেলেছে। এই তমঃ, এই তিমির, এই জড়তাই অবিদ্যা। অবিদ্যা কেবল অন্ধকার পথে ভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়; দিব্যশক্তিকে নিস্তেজ, মৃতপ্রায় করে রাখে। (ব. বো. ১৭)


সারাংশ: আলস্য ও কর্মবিমুখতার জন্য বাঙালি জাতি পিছিয়ে পড়ছে। যে বাঙালি প্রেমশক্তি ও জ্ঞানশক্তিতে পৃথিবীখ্যাত ছিল, অলসতার জন্য সে তার গৌরব হারিয়ে ফেলছে। তাই অলসতা কাটিয়ে বাঙালি জাতিকে পুনরায় নব উদ্যমে জেগে উঠতে হবে।
======================================

০8.
একজন মানুষ ভালো কি মন্দ আমরা তা বুঝতে পারি তার ব্যবহার দিয়ে। সে ভদ্র কি অভদ্র তাও বুঝতে পারি তার ব্যবহার দিয়ে। ব্যবহার ভালো হলে লোকে তাকে ভালো বলে। তাকে পছন্দ করে। ব্যবহার খারাপ হলে লোকে তাকে খারাপ বলে। তাকে অপছন্দ করে। তার সঙ্গে মিশতে চায় না। তার সঙ্গে কাজ করতে চায় না। তাকে কাছে ডাকতে চায় না। তোমার ব্যবহার দিয়েই তোমার মনুষ্যত্বের পরিচয়। (ঢা.বো. ১৮; রা. বো. ১৮, ১৭. কু বো. ১৯, ১৮, ১৭:য, বো. ১৯: ব, ৰ, ১৮)

সারাংশ: ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষের মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। সুন্দর ব্যবহারের গুণেই অন্যের ভালোবাসা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে, মন্দ ব্যবহার মানুষকে আপনজনের কাছে থেকেও দূরে সরিয়ে দেয়।

======================================
০৫.
সূর্যের আলোতে রাতের অন্ধকার কেটে যায়। শিক্ষার আলো আমাদের অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে। আমাদের দৃষ্টিতে চারপাশের জগৎ আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। আমরা জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পাই; শিক্ষার আলো পেয়ে আমাদের ভিতরের মানুষটি জেগে ওঠে। আমরা বড় হতে চাই, বড় হওয়ার জন্য চেষ্টা করি। আমরা সুন্দর করে বাঁচতে চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। আর সুন্দর করে বাঁচতে হলে চাই জ্ঞান। সেই জ্ঞানকে কাজেও লাগানো চাই। শিক্ষার ফলে আমাদের ভিতর যে শক্তি লুকানো থাকে তা ধীরে ধীরে জেগে ওঠে। আমরা মানুষ হয়ে উঠি। (ঢা. বো. ১৯, ১৭: দি বো, ১৯:চ. বো. ১৯, ১৮, ১৭:. সি. বো, ১৭:য, বো, ১৭:ব, বো.১৯)


সারাংশ: সূর্যের আলো যেমন অন্ধকার দূর করে, শিক্ষাও তেমনি অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূর করে। আমাদের মনের ভেতরে যে শক্তি রয়েছে শিক্ষার মাধ্যমেই তার বিকাশ ঘটে। সুশিক্ষার মাধ্যমেই আমরা নিজেদের যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

======================================
০৬.
সময় ও স্রোত কাহারও জন্য অপেক্ষায় বসিয়া থাকে না, চিরকাল চলিতে থাকে। সময়ের নিকট অনুনয় করো, ইহাকে ভয় দেখাও— ভূক্ষেপও করিবে না, সময় চলিয়া যাইবে, আর ফিরিবে না। নষ্ট স্বাস্থ্য ও হারানো ধন পুনঃপ্রাপ্ত হওয়া যায়, কিন্তু সময় একবার গত হইয়া গেলে আর ফিরিয়া আসে না। গত সময়ের জন্য অনুশোচনা করা নিষ্ফল। যতই কাঁদ না কেন, গত সময় কখনো ফিরিয়া আসিবে না । (জু.স্কু. স. প.১০)

সারাংশ: সময় ও স্রোত একবার চলে গেলে শত চেষ্টাতেও তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। ভগ্ন স্বাস্থ্য ও হারানো ধন কঠোর সাধনার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা গেলেও হারানো সময় কোনোভাবেই ফিরে পাওয়া যায় না। তাই সময়ের সদ্ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

======================================
০৭.
অভাব আছে বলিয়াই জগৎ বৈচিত্র্যময়। অভাব না থাকিলে জীব-সৃষ্টি বৃথা হইত। অভাব আছে বলিয়াই অভাব পূরণের জন্য এত উদ্যম, এত উদ্যোগ। আমাদের সংসার অভাবক্ষেত্র বলিয়াই কর্মক্ষেত্র। অভাব না থাকিলে সকলকেই স্থাণু, স্থবির হইতে হইত, মনুষ্য-জীবন বিড়ম্বনাময় হইত। মহাজ্ঞানীরা জগৎ হইতে দুঃখ দূর করিবার জন্য ব্যগ্র। কিন্তু জগতে দুঃখ আছে বলিয়াই তো আমরা সেবার সুযোগ পাইয়াছি। সেবা মানবজীবনের ধর্ম। দুঃখ আছে বলিয়াই সে সেবার পাত্র যত্রতত্র সদাকাল ছড়াইয়া রহিয়াছে। যিনি অন্নদান, বস্ত্রদান, জ্ঞানদান, বিদ্যাদান করেন, তিনি যেমন জগতের বন্ধু, তেমনই যিনি দুঃখে আমাদের সেবার পাত্রে অজস্র দান করিতেছেন, তিনিও মানবের পরম বন্ধু। দুঃখকে শত্রু মনে করিও না, দুঃখ আমাদের বন্ধু। (জু. স্কু.সা.প. ১১)


সারাংশ: জীবনে অভাব আছে বলেই জীবন এত বৈচিত্র্যময়। অভাব জীবনকে দিয়েছে কর্মের তাড়না। দুঃখ আছে বলেই মহৎ ব্যক্তিগণ পরহিতব্রতী হন। তাই দুঃখ মানুষের বন্ধু প্রতিম।

======================================

০৮.
ছাত্রজীবন আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়। এ সময় যে যেমন বীজ বপন করবে, ভবিষ্যৎ জীবনে সে সেরূপ ফল ভোগ করবে। এ সময় যদি আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে জ্ঞানের অনুশীলন করে যাই, তবে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় হবে। আর যদি হেলায় সময় কাটিয়ে দিই, তাহলে জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বাধ্য। যে শিক্ষা জীবন জীবিকার পথে কল্যাণকর, যে শিক্ষা মানুষকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করে, তা-ই সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষা। ছাত্রদের জীবন গঠনে শিক্ষকসমাজ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সুষ্ঠু পরিচালনার মধ্য দিয়েই ছাত্রদের জীবন গঠিত হয় এবং উন্মুক্ত হয় মহত্তর সম্ভাবনার পথ। (জু. স্কু.সা.প.১১)


সারাংশ: ছাত্রজীবনই ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি রচনার উপযুক্ত সময়। এ সময়কে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারলেই জীবন হয়ে ওঠে সম্ভাবনাময় ও সফল। জীবনের মহৎ লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষকদের সুষ্ঠু দিকনির্দেশনা অনুসরণ ছাত্রজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.